চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার(৫ জুন)। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের তদন্ত গুটিয়ে এনেছে পুলিশ।তদন্ত কর্মকর্তা কিছু না বললেও বাহিনীটির বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিতুর স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি।এ কারণে আসামির তালিকায় বাবুলের নাম থাকছে না।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তে সময় নিয়েছে প্রায় দুই বছর। কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোন মুহূর্তে আদালতে দাখিল হতে পারে এটি।
মিতু হত্যা মামলা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, ‘কাল-পরশুর মধ্যেই বিস্তারিত জানতে পারবেন।’
এ ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-ডিবি-উত্তর) মো. কামরুজ্জামান।তিনি বলেন, ‘অভিযোগপত্র চূড়ান্ত। দ্রুত তা আদালতে দাখিল করা হবে।’ মামলাটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-ডিবি-উত্তর) মো. কামরুজ্জামান।
তবে অভিযোগপত্রে কী আছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘এখনও আমাদের হাতে মিতু হত্যার চূড়ান্ত কোন প্রতিবেদন হাতে পৌঁছেনি। যদি আসে তবে জানাব।’
মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক হিসেবে মুছার নাম বলেন।
মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কবে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে, সেটি আমার জানার কথা নয়। আর এখানে আমার নাম আছে কি নেই, সেটাও আমার জানা নেই। তবে এই মামলায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, সেটি আগেও বলেছি।’
মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে। দুই বছরের মাথায় এসেও মোশাররফ তার এই দাবিতে অনড় রয়েছেন।
তিনি বলেন, পরকীয়ার জেরে বাবুল আক্তারই আমার মেয়েকে খুন করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের যখন ডেকেছিলেন, তখন আমরা এ বিষয়ে তাকে বিস্তারিত জানিয়েছি, তথ্যপ্রমাণও দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথা আমলে না নিয়ে বাবুল আক্তারকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
হত্যাকাণ্ডের মূল ‘আসামি’ পলাতক মুছা।
তিনি বলেন, মামলার মূল আসামি হওয়ার কথা বাবুল আক্তারের। অথচ মূল আসামি বাইরে ঘুরছে।
‘বাবুল আক্তার যদি আমার মেয়ের খুনের সাথে জড়িত না থাকে, তাহলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো কেন?’, প্রশ্ন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার।
বাবুলের শ্বশুরের অভিযোগ, বাবুল আক্তারই তার নিজস্ব লোক দিয়ে মিতুকে হত্যা করিয়েছে।‘বাবুল আক্তার এই রকম অপরাধ করবে, অথবা এর পরিকল্পনা করেছে তারই প্রমাণ হলো- মিতু একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, আগে অভিযোগপত্র দিক। পরে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।
মোশাররফ হোসেনের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তদন্তে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার তথ্য পাইনি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু তদন্তে যদি সেটা প্রমাণ না হয় তাকে আসামি কিভাবে করব?
ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু।
এর কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন বাবুল। সে সময় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছিল। আর শুরুতে ঘটনাটি জঙ্গিদের কাজ বলেই ধারণা করা হয়েছিল।
স্ত্রী হত্যার পর বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত এগিয়ে যাওয়ার পর বের হয়ে আসে, এর সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই। বাবুলের নামও আসে এই ঘটনায়। আর বাবুল পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের সিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে মূসা, কালু, ওয়াসিম, আনোয়ার ও নবীকে। এরা সবাই হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছাক্কু খুনিদের মোটরসাইকেল দেন বলেও পাওয়া গেছে তদন্তে। আর হত্যায় ব্যবহৃত রিভলভার সরবরাহকারী ছিলেন এহতেশামূল হক।
মামলার সন্দেহভাজন আসামির মধ্যে ওয়াসিম, আনওয়ার, শাহজাহান এবং এহতেশামূল হক বর্তমানে কারাগারে। জামিনে রয়েছেন আসামি ছায়েদুল আলম ছাক্কু, আবু নসর গুন্নু এবং রবিন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান আসামি নবী ও রাশেদ।
এছাড়াও মূল আসামি মূসা সিকদার ও কালু পলাতক। এদের মধ্যে মূসাকে নিয়েও আছে রহস্য। তার স্ত্রীর দাবি, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির দাবি, তারা মূসাকে খুঁজে পাচ্ছে না।