সুমন গোস্বামী:
মহামারী করোনায় জীবনের ঝুঁকির মধ্যেও মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন পল্লী চিকিৎসকরা। যদিও সেবাই চিকিৎসকের ধর্ম। তারপরেও কেউ কেউ হয়ত জীবনের ঝুঁকি নিতে চান না। তেমনই ব্যতিক্রমও রয়েছে শহর বা গ্রামের বিভিন্ন এলাকা রোগীদের নিয়মিত সেবা প্রদান করেছে এসব পল্লী চিকিৎসক ও হোমিও ডাক্তাররা।
বর্তমানে মহামারীর কারণে সারা দেশের মানুষ যখন আতঙ্কিত, সেসময় মানুষের বিপদে নিজের জীবন বাজি রেখে সেবা দেয়ার নাম- মানবতা। আর এমনি মাবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন অনেক পল্লী ও হোমিও চিকিৎসকরা ।
সারা দেশের মত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কে রোগী দেখতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো গড়িমসি করছে গত দুই মাস ধরে। পাশাপাশি শহর বা উপজেলায় অনেক ডাক্তারের চেম্বার করা বন্ধ। ঠিক এই সময় মানুষের পাশে এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছে পল্লী চিকিৎসকরা। করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই রোগীদের সেবা করছেন তারা। এতে চিকিৎসক, রোগীসহ সাধারণ মানুষও করোনা ঝুঁকি ছিল জেনেও তারা এইটা করেছে ।
চট্টগ্রাম শহরের কাজী দেউরী ও লাভ লেইন এলাকায় দেখা যায়, পল্লী চিকিৎসক সুমন দাশ ও হোমিও চিকিৎসক পলাশ ভট্টাচার্য্য কোন সুরক্ষা উপকরণ ছাড়াই চিকিৎসা দিয়েছে রোগীদের। ওনাদের চেম্বারে প্রতিদিন প্রায় ১০-২০ জন রোগী দেখছেন। সরাসরি চেম্বার কক্ষেই ভিড় করে বসে ছিলো রোগীরা।
হোমিও চিকিৎসক পলাশ ভট্টাচার্য্য জানান, চেম্বার ছাড়াও বাসাতে গিয়ে আমাকে রোগী দেখতে হয়। গড়ে প্রতিদিন ২০জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে কোনো সহায়তা, সুরক্ষা উপকরণ দেয়া হয়নি আমাদের।
পল্লী চিকিৎসক সুমন দাশ জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যায় পর্যন্ত অনেক রোগী দেখতে হয়েছে প্রতিদিন, জ্বর-কাশির রোগীর বেশি ছিলো। এরা শহরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডাক্তার চেম্বার ঘুরে কোন সেবা পাননি। অধিকাংশই পরিচিতজন, এখানে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ফটিকছড়ি হারুয়ালছড়ি পল্লী চিকিৎসক সুজন বৈষ্ণব জানান, ফটিকছড়িতে বেসরকারি হাসপাতাস ও ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ থাকাতে অনেক বেশি রোগী দেখতে হয়েছে আমাদের। জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা সেবা প্রদান করছি।
চট্টগ্রাম পল্লী চিকিৎসক কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা আর কে দাশ রুবেল বলেন, করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছেন জেলার তিন হাজারের বেশি পল্লী চিকিৎসক। জেলার শতকরা ৮০ জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন পল্লী চিকিৎসকরা। করোনা মোকাবিলায় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের দিকে নজর রাখছে না।
পল্লী চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ রোগীর জ্বর, ঠান্ডাজনিত সমস্যা ও কাশি রয়েছে। তবে পল্লী চিকিৎসক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ রোগী পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পল্লী চিকিৎসকসহ সবাইকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে চিকিৎসা দিতে বলেছি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পল্লী চিকিৎসকদের জন্য কোনো সুরক্ষা উপকরণ দেয়া হয়নি।